আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায়

 দেশে এখন বর্তমানে চলছে শীতকাল, আর এই শীতকালে গ্রামবাংলার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন স্থানে খেজুরের গুরের সমারোহ ও উৎপাদন চলছে। খেজুরের গুর যেমন খাইতে মিষ্টি ঠিক তেমনি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। দেশের প্রতিটি মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই খেজুরের গুর। আর বর্তমানে খেজুরের গুরে ব্যাপক ভেজাল মিশ্রিত হয়ে আসছে। তাই আসুন জেনে নিন এই পোষ্টটি পড়ে আস্ল খেজুরের গুর চেনার বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে।


আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায়

এই পোষ্টটি পড়ার মাধ্যমে আমরা যা যা জানতে পারবঃ

আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায়

আসল খেজুরের গুড় কেমন হয় এবং আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায়গুলো নিম্নে তুলে ধরা হল চলুন জেনে নিই
  • এক গ্লাস পানিতে এক টুকরো গুড় মেশান যদি এটি পানির সাথে মিশে যায় তাহলে ভাববেন এটি আসল খাঁটি খেজুরের গুড়।
  • এক গ্লাস পানিতে এক টুকরো গুড় দিয়ার পর যদি গ্লাসের তলায় যদি অবশিষ্ট জমে থাকে তাহলে ভাববেন এটি ভেজাল খেজুরের গুড়।
  • আসল খেজুরের গুড়ের রং হালকা বাদামি কালারের হয়।
  • ভেজাল মিশ্রিত খেজুরের গুড়ের কালার হালকা লাল বর্ণের ও চকচকে হয়।
  • আসল খেজুরের গুড়ের থেকে খেজুরের রসের ঘ্রান বের হয়।
  • আসল খেজুরের গুড় ভেজাল গুড়ের তুলনায় মিষ্টি বেশি হবে।
  • ভেজাল খেজুরের গুড় চুলায় যত জ্বাল করবেন সেটি তত তিতা ও ননটা হবে।
  • আসল খেজুরের গুড় ভেজাল গুড়ের তলনায় নরম ও সফট হবে।
  • আসল খেজুরের গুড় মুখে দিলে নিমিষেই গলে যাবে।
আশা করি উপরের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই আসল খেজুরের গুড় চিনতে পারবেন।



আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায়



খাঁটি খেজুরের গুড়ের উপকারিতা

খাঁটি খেজুরের গুড় মানব দেহের জন্য অনেক অনেক উপাকারি। খাঁটি খেজুরের গুড় যেমনি স্বাদ ও গন্ধে ভরপুর তেমনি এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। তাহলে চলুন নিম্নে আমরা খাঁটি খেজুরের গুড়ের উপকারি দিকগুলো দেখে নিই
  • খাঁটি খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে তারা যদি নিয়মিত খেজুরের গুড় খায় তাহলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরন করবে।
  • খেজুরের গুড় নারীদের জন্য অনেক বেশি উপকারি কারন নারী ও পুরুষের গঠন এক নয়।
  • খেজুরের গুড় হজম শক্তি বাড়ায় যাদের হজমের সমস্যা তারা নিয়মিত এক টুকরো করে গুড় খাবেন।
  • খেজুরের গুড় শরীরের কষ্ট কাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
  • খেজুরের গুড় মানব দেহের ওজন কমাতে সাহায্য কর্রে।
উপরের আলোকের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি অবশ্যই জানতে পারলেন খাঁটি খেজুরের গুড়ের উপকারিতা সম্পর্কে।


খাঁটি পাটালি গুড় কিভাবে চিনবেন

খাঁটি পাটালি গুড় চকচক করে না। খাঁটি পাটালি গুড় ভেজাল গুড়ের তুলনায় কিমি. শক্ত হয়। খাঁটি পাটালি গুড়ের রং কালচে লাল বর্ণের হয়ে থাকে এবং হাত দিয়ে খুব সহজেই ভাঙ্গা যায়। খাঁটি খেজুরের পাটালি গুড় অনেক রসালো ও মিষ্টি হয় তেমনি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। খাঁটি পাটালি গুড়ের এক টুকরো যদি এক গ্লাস পানিতে ছেড়ে দেন তাহলে এটি খুব সহজেই মাটির সাথে মিশে যাবে। 

আর যদি ভেজাল মিশ্রিত গুড় হয় তাহলে পানির সাথে না মিশে গ্লাসের তলায় গুড়ের মিশ্রন জমা হয়ে থাকবে। যেহেতু বর্তমানে খেজুরের গুড়ে অনেক বেশি ভেজাল মিশ্রিত করছে উৎপাদকরা তাই ভালো করে দেখে পরীক্ষা করেই খাওয়া উত্তম। আর উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই খাঁটি পাটালি গুড় চিনতে পারবেন।

খাঁটি ঝোলা গুড় কিভাবে চিনবেন

খাটি ঝোলা গুড় একদম মধুর মতো নরম ও সফট হবে। খাঁটি খেজুরের ঝোলা গুড় অনেক রসালো মিষ্টি সুস্বাদু হবে। খাঁটি খেজুরের ঝোলা গুড় এক চামচ এক গ্লাস পানিতে দিলে পানির সাথে খুব সহজেই মিশে যাবে আর যদি ভেজাল হয় তাহলে যেম্ন চকের গুড়ো ইত্যাদি মেশানো থাকে তাহলে সেটি গ্লাসের তলায় জমা হবে। 

খাঁটি খেজুরের গুড় যেমন আপনার শরীরের জন্য উপকারি তাহলে আপনাকে ভালো পরীক্ষা করে এবং যাচাই বাছাই করে আপনি খাঁটি খেজুরের গুড়ি সেবন করুন যা আপনার শরীরের জন্য উপকারি। পরীক্ষা না করে না জেনে ভেজাল গুড় সেবন করলে আপনি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে ভালো করে পরীক্ষা করে খাঁটি ঝোলা গুড় সেবন করুন।

ভেজাল খেজুরের গুড় চেনার উপায়

আসল খেজুরের গুড়ের তুলনায় ভেজাল মিশ্রিত গুড় অনেক শক্ত হয়। ভেজাল গুড়ের রং চকচক করে বেশি। এক টুকরো ভেজাল গুড় এক গ্লাস পানিতে দিলে গুড়ের মিশ্রন পুরোপুরি না গলে গ্লাসের তলায় জমে থাকে এটা দেখে বুঝতে হবে যে এটি ভেজাল মিশ্রিত খেজুরের গুড়।

আসল খাঁটি খেজুরের গুড় যেমন রসালো ও মিষ্টি হবে ভেজাল খেজুরের গুড় ননটা ও তেতো তেতো লাগবে। আস্ল খাঁটি খেজুরের গুর যেমন শরীরের জন্য উপকারী তেমনি ভেজাল মিশ্রিত খেজুরের গুড় শরীরের জন্য অনেক অনেক ক্ষতিকর। তাই উপরের পদক্ষেপ অনুসরণ করে আসল নকল বিচার করে খেজুরের গুড় ক্রয় ও সেবন করুন।

খেজুরের গুড় কেনো খাবেন

খেজুরের গুড় যেমন রসালো তেমনি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরন করতে খেজুরের গুড় খাবেন কারন খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যাদের শরীরে ওজন বেশি ওজন কমাতে নিয়মিত খেজুরের গুড় খান।

খেজুরের গুড় হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে তাই হজম শক্তি কম তারা নিয়মিত খেজুরের গুড় খান। যাদের ত্বক খসখসে ত্বককে সুন্দর ও কোমল রাখতে নিয়মিত খেজুরের গুড় খাবেন। মানবদেহের সকল সমস্যার সমাধান করতে এবং শরীরে পুষ্টির চাহিদা বাড়াতে নিয়মিত খেজুরের গুড় খান। আশা করি অবশ্যই বুঝতে পারছেন খেজুরের গুড় কেনো খাবেন।

বাংলাদেশের কোন জেলায় সবথেকে বেশি খেজুরের গুড় উৎপন্ন হয়

আসল খেজুরের গুড় চেনার পাশাপাশি অনেকের মনে প্রশ্ন জেগে থাকে যে বাংলাদেশের কোন জেলায় বা অঞ্চলে খেজুরের গুড় বিখ্যাত ও বেশি উৎপন্ন হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের যশোর জেলায় খেজুরের গুড় অনেক বেশি উৎপন্ন হয় এবং বাংলাদেশের যশোর জেলা গুড়ের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও কমবেশি সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী এসব জেলাতেও কমবেশি ভালোই খেজুরের গুড়ের উৎপাদন হয়ে থাকে।

শীতের মহাসমারোহের প্রথম স্থান দখল করে আছে এই খেজুরের গুড়। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয় কাড়ে এই খেজুরের গুড়। শীতকালীন বিভিন্ন পিঠা পুলি মানেই খেজুরের গুড়ের মিলন মেলা বিভিন্ন পিঠা পুলির সাথে খেজুরের গুড়ের মিশ্রন যেনো এক বিশাল সন্ধিক্ষণে মিলিত হয়।


আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায়


খেজুরের গুড়ের অপকারিতা

খেজুরের গুড় যেমন শরীরে রক্ত বাড়াতে সহায়তা করে যেহেতু খেজুরের গুড় মিষ্টি তাই অতিরিক্ত খেজুরের গুড় খেলে শরীরে শর্করার মাত্রা বাড়াবেই। আনুমানিক প্রতি ১০ গ্রাম খেজুরের গুড়ে ৯.৭ গ্রাম চিনি থাকে। তাই অতিরিক্ত গুড় খাওয়া শরীরের জন্য অনেক অনেক ক্ষতিকর। আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত  এলারজির সমস্যা থেকে থাকে অবস্থায় যদি খেজুরের গুড় খেয়ে থাকেন তাহলে আপনি অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

তাই এমতাবস্থায় খেজুরের গুড় খাওয়া পরিহার করতে হবে। গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গুড় খেলে আপনার নাক দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হতে পারে তাই গ্রীষ্মকালে খেজুরের গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু খেজুরের গুড় শরীরের অনেক উপকারী তাই তার অপকারি দিকগুলো লক্ষ্য রেখে খেজুরের গুড় খাওয়া জরুরী।

দেশজুড়ে খেজুরের গুড়ের চাহিদা কেমন

দেশজুড়ে খেজুরের গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মন কেড়ে থাকে এই খেজুরের গুড়। খেজুরের  গুড় স্বাদ ও মিষ্টির দিক দিয়ে অতুলনীয়। আর খেজুরের গুরের পুষ্টি উপাদানও অনেক বেশি। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে খেজুরের গুড় চাষ হয় না তারাও বিভিন্ন ভাবে খেজুরের গুড় ক্রয় করে খেজুরের গুড়ের স্বাদ গ্রহণ করে থাকে।

অনলাইনেও খেজুরের গুড়ের ধুম পড়ে যায় খেজুরের গুড়ের বেচা বিক্রির। খেজুরের গুড় ছাড়া শীতকালীন পিঠা পুলির কোনো কথায় আসে না। খেজুরের গুড় যেমনি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর তেমনি এর চাহিদাও সারাদেশ জুড়ে অতুলনীয়।

শেষের পাঠ

আজকের বিষয়টি ছিল আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায়। আমরা উপরে আসল খেজুরের গুড় চেনার উপায় অনেক রকম ভাবে বর্ণনা করেছি। আশা করি আপনিও উপরের ধাপগুলো অনুরন করে আসল খেজুরের গুড় কোনটি তা বুঝতে পারবেন। আর আপনি অবশ্যই উপরের ধাপ অনুসরণ করে খেজুরের গুড় ক্রয় করলে আপনাকে কেউ ঠকাতেও পারবে না। এবং আপনিও আসল খাঁটি খেজুরের গুড় ক্রয় করতে পারবেন। ভেজাল গুড় যেহেতু শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাই আসল খেজুরের গুড় নিশ্চিত করেই ক্রয় করা উচিত। উপরের ধাপগুলো লক্ষ্য করলে আসল ভেজাল আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url