ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের গুরুত্ব
শবে বরাত ফারসি ভাষা থেকে নামকরণ করা হয়েছে। শবে শব্দের অর্থ ভাগ্য আর বরাত শব্দের
অর্থ রাত অর্থাৎ একত্রে শবে বরাতকে বলা হয় ভাগ্যের রজনী বা ভাগ্য বরাতের রাত। আর
ইসলামের ভাষায় শবে বরাতের গুরুত্ব অনেক এবং অনেক অনেক মূল্যবান। আর এই শবে বরাত কে
যে মূল্যহীন মনে করবে তার মতো হতভাগা আর কেউ নাই। চলুন দেখে নিই ইসলামের দৃষ্টিতে
শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের গুরুত্ব
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। শবে বরাত প্রতিটি মুসলিম
মানব জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাত আরবিতে লাইলাতুল বরাত এবং বাংলায়
সোভাগ্যের রজনী। মুলত এই দিনে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের গুনাহ মাফ করে থাকেন। শবে
বরাতে সারাদেশের মুসলিম উম্মা গন আল্লাহ তায়ালার নিকটে জিকির তাসবি তাহলিল ও নফল
ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকটে নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য অনুনয়
বিনিময় করে ক্ষমা প্রাথনা করে।
শবে বরাত এই দিনটিকে উল্লেখ করেই বলেছেন হে আমার
বান্দারা তোমরা এই দিনে বেশি বেশি নফল ইবাদত করো এবং আমার কাছে ক্ষমা প্রাথনা করো
আমি আল্লাহ নিশ্চয় তোমাদেরকে ক্ষমা করবো। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন যদি তুমি
বান্দা ঠিকমতো চাইতে আমি আল্লাহ অবশ্যই তোমার মনের সকল চাওয়া ও আশা পূরণ করে দিব
তুমি বান্দা চাইতে দেরি আমি আল্লাহ দিতে দেরি করি না।
আর যে সুযোগ পাওয়ার পরও
নিজেদের গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না দুনিয়াতে তার মতো হতভাগা কেউ নেই। অনেকে
আছেন যারা এই দিনে তাদের মৃত বাবা মায়ের নামে মিলাদ ও মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন।
সারাদেশে প্রতিবছর একবারি এই শবে বরাত পালিত হয়ে থাকে আর ইসলামের দৃষ্টিতে শবে
বরাতের গুরুত্ব অনেক অনেক গুন বেশি।
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত পালনের সঠিক নিয়ম
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত পালনের নিয়ম। এই শবে বরাত যেহেতু সকল মুসলিম উম্মাদের
জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সোভাগ্যের রজনী। আর ইসলামের দৃষ্টিতেও শবে বরাত অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। এখন চলেন ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত পালনের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে
জেনে নিই।
শবে বরাতে বেশি বেশি দান সাদকা করা। যেহেতু মাগরিব পর থেকেই বান্দাদের আমল নামায়
নেকি লেখা হয়ে থাকে এবং গুনাহের পাল্লা হালকা হতে থাকে। তাই সন্ধ্যার পর গোসলের
সঠিক নিয়ম মেনে গোসল করা এবং কাপড় না ধুয়ে না চিপে নেড়ে দেওয়া।
এতে করে কাপড় থেকে
সারারাত যত ফোটা পানি ঝরবে বান্দার আমল নামায় সেই পরিমাণে নেকি লেখা হবে। গোসল
শেষে সঠিক নিয়ম মেনে সারারাত বেশি বেশি নফল ইবাদত করা এবং আল্লাহর নিকট নিজের সকল
গুনাহ সমূহ ও কৃতকর্মের জন্য পানা চাওয়া। আর যদি বান্দা পারে তাহলে ঐদিনে রোজা
রাখা।
শবে বরাত পালনের মাধ্যমে প্রতিটি মুসলিম জাতি আগাম সংকেত পেয়ে যায় যে সামনে রমজান
মাস আসতে চলছে। এবং সে অনুযায়ী মুসলিম জাতি আগে থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি
গ্রহণ করে থাকে। শবে বরাত এমনি বরকত ময় ও ফজিলত পূর্ণ রজনী যে রাত্রিতে আল্লাহর
কাছে যদি বান্দারা তাদের সকল গুনাহর জন্য পানা চায় আল্লাহ তায়ালা নিজ গুনে ওই
বান্দার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত পালনের উপকারিতা
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের উপকারিতা। শবে বরাত প্রতিটি মুসলিম উম্মাদের জন্য
অনেক অনেক উপকারি। এই শবে বরাত পাওয়ার পরও যে বান্দা তার জীবনের গুনাহ সমূহ ও
কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিতে পারলো না তার মতো হতভাগা কেউ নেই।
লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত এই দিনে বান্দাদের পাপের পাল্লা হালকা হয় আর নেকির
পাল্লা ভারী হয়।
এইদিনে যদি কোনো বান্দা আল্লাহর নিকট তার গুনাহের জন্য পানা চায়
তাহলে আল্লাহ তায়ালা ওই বান্দার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহ তায়ালা
নিজেই বলেছেন হে আমার বান্দারা তোমাদের কার কি প্রয়োজন আমার কাছে চাও আমি নিশ্চয়
তোমাদের সকল চাওয়াগুলো পূর্ণ করে দিব।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন তুমি বান্দা
চাইতে দেরি আমি আল্লাহ পূরন করতে দেরি করি না। তাই দেখুন সঠিক নিয়ম মেনে শবে বরাত
পালন করলে কতটা উপকার। আমরা সবাই ইসলামের সকল দৃষ্টিকোণ মেনে শবে বরাত পালন করবো
আর নিজেদের পাপ ও পূর্ণের জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রাথনা করবো আল্লাহ
তায়ালা নিশ্চয় আমাদের সকলকে মাফ করে দিবেন।
আরবি মাসের কি মাসে শবে বরাত পালিত হয়
আরবি মাসের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাতে শবে বরাত উদযাপন করা হয়ে থাকে। শবে
বরাত মূলত সকল মুসলিম উম্মাদের জন্য সোভাগ্যের রজনী। শবে বরাত ফারসি শব্দ আরবি
লালাতুল বরাত এবং বাংলায় সোভাগ্যের রজনী। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাতে
বিভিন্ন জায়গায় বান্দারা নফল ইবাদতে ও সিজদায় আল্লাহর নিকটে নত হয়। এবং
আল্লাহর কাছে তাদের পাপ ও গুনাহের জন্য বেশি বেশি ক্ষমা প্রাথনা করে থাকেন।
এইদিনে যদি কেউ আল্লাহর নিকট কিছু চায় আল্লাহ তায়ালা তাদের কাউকে খালি হাতে ফেরান
না। বহির্বিশ্বের সব স্থানে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাতেই শবে বরাত পালিত হয়।
এই দিনে অনেক রোজাও রাখে আর এইদিনে রোজা রাখলে বান্দার আমল নামায় শত শতগুণ নেকি
লেখা হয়ে থাকে। তাই শাবান মাসের ১৪ তারিখ মুসলিম উম্মাদের জন্য মুক্তির রজনী নামে
খ্যাত।
শবে বরাতে হালুয়া রুটি খাওয়া যাবে কি
শবে বরাতে হালুয়া রুটি খাওয়া যাবে কি ইসলামে এমন কোনো উক্তি পাওয়া যায় নি। শবে
বরাতে হালুয়া রুটি খাওয়া হালুয়া রুটি বিতরণ করা নাজায়েজ। শবে বরাতে অনেকই হালুয়া
রুটি খান এবং বিতরণ করেন এই মনে করে যে শবে বরাতে হালুয়া রুটি খেলে বা বিতরণ করলে
হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া দিবে।তবে এমন কোনো উক্তি কোথাও খুজে পাওয়া
যায় নি।
আবার অনেকে এই মনে করেন যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উহুদের ময়দানে
কাফেরদের সাথে যুদ্ধ বিধস্ত হয়ে নবী করীমের দাঁত মোবারক শহীদ হয়েছত। তখন নাকি নবী
করিম হালুয়া রুটি খেয়েছিল অনেকে এই মর্মে হালুয়া রুটি খায় আর বিতরণ করে। উপরের যে
উক্তিগুলো অনুসরণ করে হালুয়া রুটি খান বা বিতরণ করেন এটি সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন।আপনি হালুয়া রুটি খান বিতরণ করেন সমস্যা নেই। তবে শবে বরাত বা উপরের কোনো উক্তিকে
সমর্থন করে নই।
শবে বরাতের দোয়া
শবে বরাতের দোয়া, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফুয়া, ফা'ফু আ'ন্নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমাকে ভালোবাসো, তাই তুমি আমাকে ক্ষমা
করো।
পবিত্র শবে বরাতের রাতে এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করবেন আল্লাহ তায়ালা আপনার
জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং আপনার মনের সকল আশা পূর্ণ করে দিবে।শবে বরাত যেমন মুসলিম জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি শবে বরাতের দোয়া ঠিক
ততোটাই উপকারি। তাই অবশ্যই শবে বরাতের রাত্রিতে এই দোয়াটা বেশি বেশি পাঠ করা
উত্তম।
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের সালাত আদায়ের নিয়ম
ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের সালাত আদায়ের নিয়ম, শবে বরাতের সালাত নফল সালাতের
অন্তর্ভুক্ত। শবে বরাতের রাত্রিতে বান্দারা বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্য এবং গুনাহ মাফের জন্য নফল ইবাদতের মাধ্যমে এই রাত্রি যাপন করে থাকে।
অনেকে অনেক রকম রাত্রি যাপন করে থাকেন ও সালাত আদায়্লামের।
চলেন দেখে নিন ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের সালাত আদায়ের নিয়ম। শবে বরাতের সালাত
মূলত নফল সালাত। শবে বরাতের নামাজের সময় রাত ১২ টার পর থেকে শুরু হয়। শবে বরাতের
সালাত দুই রাকাআত করে নফল নিয়ত বেঁধে সালাত আদায় করতে হবে। প্রতি দুই রাকাআত
সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে শবে বরাতের দোয়া পড়তে হবে। আর দুই রাকাআত করে চার
রাকাআতের শেষে মোনাজাত করতে হবে। আবার যদি মনে করেন পুরো সালাত আদায় করে একবারে
শেষে মোনাজাত করবেন তাও হবে।
এইভাবে আপনাকে প্রায় ১২ রাকাআত সালাত আদায় করতে হবে। আর যদি পারেন তাহলে তারও
বেশি আপনি সালাত আদায় করতে পারবেন। নফল সালাত যত পড়বেন আপনার আমলনামায় ততো বেশি
নেকি লেখা হবে। এবং সর্বশেষে বিতরের তিন রাকাআত ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হবে। আপনি
সালাত আদায় করবেন তাহলে সঠিক নিয়ম মেনে এবং জেনেই সালাত আদায় করুন।
শবে বরাত পালন না করলে কি ক্ষতি হবে
শবে বরাত পালন না করলে কি ক্ষতি হবে চলুন দেখে নিই, শবে বরাত যেহেতু সকল মুসলিম
উম্মাদের জন্য মুক্তির রজনী। এই দিনে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তায়ালা কোনো
বান্দাকেই খালি হাতে ফেরান না। যে বান্দা পবিত্র শবে বরাত পাওয়ার পরও নিজের
গুনাহগুলো মাফ করে নিতে পারলো না তার মতো হতভাগা আর কেউ নাই।
শবে বরাত মুসলিম উম্মাদের জন্য এতটা যে গুরুত্বপূর্ণ এইদিনে আল্লাহ তায়ালা নিজেই
বলেছেন।হে আমার বান্দারা তোমরা তোমাদের গুনাহ মাফের জন্য আমার কাছে ক্ষমা প্রাথনা
করো আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিবো। তোমাদের চাওয়া পাওয়াগুলো আমার কাছে প্রকাশ করো
আমি তোমাদের সকল আশা পূরন করে দেবো।
তাহলে দেখেন আপনি যদি শবে বরাত পালন না করেন কত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই
ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে এবং আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য পেতে সঠিক নিয়ম মেনে শবে বরাত
পালন করুন।
শেষের পাঠ
আজকের বিষয় ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাতের গুরুত্ব। ইসলামের দৃষ্টি কোন থেকে শবে
বরাতের গুরুত্ব উপরে আলোচনা করা হলো। শবে বরাত বছর একবারি আমাদের মাঝে আসে এবং
মুসলিম উম্মাদের সারাজীবনের গুনাহ মাফ করে নেওয়ার একটা বড় সুযোগ। শবে বরাতে নফল
ইবাদতের মধ্য দিয়ে আল্লাহর কাছে গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রাথনা করলে আল্লাহ তায়ালা
বান্দার সকল গুনাহকে মাফ করে দেন।
আপনি কি ইসলামের দৃষ্টিকোণ মেনে শবে বরাত পালন করতে চাচ্ছেন। তাহলে উপরের সকল
তথ্য অনুযায়ী শবে বরাত পালন করেন এবং ইবাদত করেন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা
প্রাথনা করেন নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আপনাকেও কবুল করবেন। আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতকে
বান্দাদের জন্য অনেক অনেক বরকত ও ফজিলত পূর্ণ করে পাঠিয়েছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url