সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে
প্রিয় পাঠক সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে সে সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জানতে
চাচ্ছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন কিন্তু পাচ্ছেন না। তাহলে এই
পোস্টটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এখানে সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে নিম্নে
বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়াও সাওম পালনের আরো অন্যান্য বিষয়েও নিম্নে
আলোচনা করা হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ সাওম পালনের সুফল
সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে
সাওম পালনে যা যা সুফল রয়েছে, সাওম প্রতিটি ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। সাওম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। যারা
ডায়বেটিসে আক্রান্ত সাওম তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারন সাওম পালনের
মাধ্যমে ডায়বেটিস রুগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে আসে। আবার
হৃদরোগের জন্যও সাওম অনেক অনেক উপকারি।
হৃদরোগ জনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাওম অত্যন্ত ভূমিকা অর্জন করে। সাওম
এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট অর্জন করতে
সক্ষম হয়। কারন সাওম রাখার মাধ্যমে বান্দা সকল প্রকার পানাহার সহ সকল প্রকার
খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। আর এই সাওম এতটা মূল্যবান যে যার প্রতিদান
স্বয়ং আল্লাহ নিজেই দান করবেন।
নিয়মিত রোজা রাখার ফলে মনের সকল প্রকার অন্ধকার ও ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সাওম
মানুষের মনকে সুন্দর ও পবিত্র করে তোলে এবং পাপ মুক্ত থাকতে সহায়তা করে। সাওম
মানুষকে আত্ম সংযমী ও সহনশীল হতে সাহায্য করে। সাওম মানুষের অন্তরকে পাপ মুক্ত
রাখার পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতেও বিশেষ ভাবে ভুমিকা অর্জন করে।
এইজন্য সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সাওম পালনের
সুফল সম্পর্কে জানলেই শধু হবে না, সাওম পালনের নিয়ম ও সাওম পালনের উপকারিতা
সম্পর্কেও জানতে হবে।
সাওম পালনের সঠিক নিয়ম
উপরে সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে সে সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমরা
সাওম পালনের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানবো, সাওম পালনে কিছু নিয়ম রয়েছে আর রয়েছে কিছু
শর্ত। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ওপর সাওম বাধ্য করার পাশাপাশি কিছু শর্ত আরোপ
করেছেন। নিম্নে সাওম পালনের সঠিক নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- সাহরী খাওয়া
- সাহরীর শেষ সময়ে সাহরী খাওয়া
- পেটের এক তৃতীয় অংশ খাওয়া
- মিসওয়াক / ব্রাশ করা
- নিয়ত করা
- ইফতার করা। ৫ মিনিটের অধিক সময় ধরে ইফতার না করা
- বিজোড় সংখ্যক খেজুর দ্বারা, তা না হলে পানি দ্বারা, আর তা না হলে যেকোনো খাবার দিয়ে ইফতার করা
- ইফতারের পর দোয়া পড়া
- রমজানের শেষে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা
সাওম বা রোজা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকলেই পরিপূন্যভাবে আদায় হবে না। পানাহার
থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সবসময় নিজের অন্তরকে পরিষ্কার ও পবিত্র রাখা প্রয়োজন।
অহেতুক কথা না বলা গিবত পরনিন্দা ও মিথ্যা কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। রমজান
মাসে বেশি বেশি দান সাদকা করা। এবং পরিবারের সবাই একত্রে বসে সাহরী ইফতার করা।
রমজান মাসে সাওম পালন করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে এটা জানার পাশাপাশি রমজান মাসে সাওম পালন করলে কি কি
উপকার পাওয়া যায় সেটি জানাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসকে আল্লাহ তায়ালা
বান্দাদের জন্য অনেক গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিয়েছেন। এই রমজান মাসে পবিত্র আল কুরআন
নাজিল করা হয়েছে। আর রমজান মাসে পুরোপুরি সাওম পালন করা অত্যাবশ্যক।
রমজানের ত্রিশটি রোজাকে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনটি ভাগে ভাগ করে পাঠিয়েছেন যেমন-
১. রহমত, ২. মাগফিরাত, ৩. নাজাত। প্রথম থেকে দশম রমজান পর্যন্ত রহমত। এগারো থেকে
বিশ রমজান পর্যন্ত মাগফিরাত। এবং একুশ থেকে ত্রিশ রমজান পর্যন্ত নাজাত। আর যে
রমজান মাসে সঠিক সবগুলো সাওম পালন করলো সে স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনটি
পুরস্কার অর্জন করলো।
আর রমজান মাসে সাওম পালন করার ফলে হার্ট ভালো থাকে এবং হার্টের ঝুকি কমায়। সাওম
পালনের ফলে মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মাংশ পেশী উন্নত হয়। আর রমজানের
সাওম পালনের মাধ্যমে শরীর মন দুটোই সুস্থ থাকে। আপনি যদি সঠিক নিয়মে রমজান মাসে
সাওম পালন করতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই উপরিউক্ত উপকার পাবেন।
সাওম পালন করলে কি কি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
সাওম পালনের কি কি সুফল রয়েছে এটি জানার পাশাপাশি সাওম পালন করলে কি কি রোগ থেকে
মুক্তি পাওয়া যায় এটিও জানা খুব জরুরী। অনেকেই মনে করেন রোজা রাখলে শরীরের ক্ষতি
হবে। কিন্তু এই ধারনা ভুল। বরং রোজা রাখলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার
অনেকে মনে করেন রোজা রাখার ফলে পেটে আলসারের সৃষ্টি করে এবং অ্যাসিডের মাত্রা
বাড়ায়।
প্রকৃতপক্ষে সব ধারনায় ভুল। রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার ফলে অ্যাসিডের মাত্রা
কমে যায়। রোজা তারুন্যকে ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং ব্যায়ামের চেয়েও উপকারি। রোজা
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। রোজা মানুষের শরীরের ক্ষতিকর
চর্বি কমাতে এবং দেহের কোষ বিভাজনে খুবই উপকারি। মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের
ঝুকি কমাতেও সাওম বিশেষ ভূমিকা ফেলে।
সাওম পালনের ফলে হৃদরোগের মতোও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এক কথায় সাওম পালনের
ফলে মানবদেহের বড় বড় সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজে। মানবদেহের সকল
প্রকার রোগ থেকে বাঁচার জন্য সাওম পালন বা রোজা রাখুন এবং রোগ মুক্ত থাকুন। সাওম
পালন করে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি সাওম পালনে কি কি সাধন আছে নিম্নে জেনে
নিন।
সাওম পালনে ব্যক্তি জীবনে কি কি সাধিত হয়
সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে তার পাশাপাশি, সাওম পালনে ব্যক্তি জীবনে কি কি সাধিত
হয় এটা জানাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাওম প্রতিটি মুসলিম জাতির জন্যই ফরয। মূলত
রমজান মাসে ত্রিশ দিন সাওম পালন করা হয়ে থাকে। সাওম পালনে ব্যক্তি জীবনে অনেক
উন্নতি সাধিত হয়। চলেন দেখি সাওম পালনে ব্যক্তি জীবনে কি কি সাধিত হয়।
- শারীরিক উৎকর্ষ
- আত্মিক উৎকর্ষ
- সামাজিক সাফল্য
- ব্যক্তিগত উন্নতি
শারীরিক উৎকর্ষঃ রোজা থাকলে দিনের বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। এতে করে
আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট চর্বি কমে যায়। সেই সাথে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকারক
টক্সিন কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পায়।
আত্মিক উৎকর্ষঃ সর্বোপরি সাওম পালনের মাধ্যমে দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি
অর্জিত হয়। এবং এর মাধ্যমে সাওম পালন কারীর আত্মিক উৎকর্ষ সাধিত হয়।
সামাজিক সাফল্যঃ মাহে রমজানে আমাদের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। রমজান
মাসে কাজকর্মে বিশেষ গতি ফিরে আসে এবং সমাজের সাফল্য ত্বরান্বিত হয়।
ব্যক্তিগত উন্নতিঃ রোজা উত্তম চরিত্র গঠনেও সহায়তা করে। রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর
ভয়ে সকল প্রকার অন্যায় অ পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। ফলে ব্যক্তি জীবনে উন্নতি সাধিত
হয়।
সাওম ইসলামের কততম স্তম্ভ
সাওম পালনের কি কি সুফল রয়েছে তার পাশাপাশি সাওম ইসলামের কততম স্তম্ভ সেটা জানাও
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেকেই জানি যে সাওম ইসলামের কততম স্তম্ভ। আবার অনেকে
জানিনা সাওম ইসলামের কততম স্তম্ভ। সাওম আরবি শব্দ, আর রোজা ফারসি শব্দ। সাওম
শব্দের অর্থ বিরত থাকা। সাওম বা রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভের একটি।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সাওম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাওম আমাসদের মুসলিম
জাতিদের একটি প্রধান স্থান দখল করে রয়েছে। আর এই সাওম পালন করা প্রতিটি মুসলিম
জাতির জন্য অনেক অনেক গুরুত্ব বয়ে আনে। মূলত সাওমকে রমজান মাসে সবার জন্য ফরয করা
হয়েছে। ইসলামের এই তৃতীয় স্তম্ভ পালনের মাধ্যমে অনেক বরকত ফজিলত অর্জন করা সম্ভব।
রোজা না রাখলে কি শাস্তি হবে
সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে তার পাশাপাশি রোজা না রখলে কি কি শাস্তি হবে এটাও
জানা জরুরী। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। যারা রোজা রাখবে না বা
রোজা রেখে ভেঙে ফেলবে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। তাদের স্থান হবে জাহান্নাম।
সুতরাং যে ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কারন ছাড়া রোজা ত্যাগ করলো।
সে ইসলামের ফরয বিধান ত্যাগ করলো, এবং সে কবিরা গুনাহ করলো। আর একটি কবিরা গুনাহই
মানুষের জাহান্নামি হয়া যথেষ্ট। তাই অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে একজন
সুস্থ মানুষকে রোজা রাখতেই হবে। জাহান্নামের মতো কঠিন শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে
রোজা রাখা অনেক ভালো। রোজা রাখলে আমরা পুরস্কার পাবোই এবং তার পাশাপাশি সকল খারাপ
কাজ ও অন্যায় থেকে দূরে থাকতে পারবো।
ইচ্ছা করে রোজা ভাঙলে কি হয়
সাওম পালনের কি কি সুফল রয়েছে তার পাশাপাশি ইচ্ছা করে রোজা ভাঙলে কি হয় এটা জানাও
খুব দরকার। ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা ভাঙলে কাফফারার বিধান রয়েছে। কাফফারা আরবি শব্দ।
এর অর্থ জরিমানা, পরিপূরক বা আবরণ। রোজার কাফফারা বলতে রমজান মাসের ফরয রোজা
শরীয়ত অনুমোদিত কারন ছাড়া ভেঙে ফেললে পরবর্তীতে ওই ফরযের দায় থেকে মুক্তি লাভের
জন্য একটির বদলে ষাটটি রোজা রাখতে হবে।
রোজা যেহেতু আমাদের সকল মুসলিম জাতির জন্যই ফরয তাই রমজান মাসের ফরয রোজা শরীয়ত
অনুমোদিত কারন ছাড়া ভাঙবো না। আমরা অনেকে জানার পরও রোজা ভাঙি এবং নিজের ঘারে
নিজেই গুনাহর বোঝা তুলে নিই। আমরা কখনই শরীয়ত অনুমোদিত কারন ছাড়া রোজা ভাঙবো না।
রোজার মূল উদ্দেশ্য কি
সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে তার পাশাপাশি রোজার মূল উদ্দেশ্য কি এটা সম্পর্কেও
জানতে হবে। রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা এবং পাপকাজ থেকে
বিরত থাকা। নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া অর্জন
করা। হে ঈমান্দার গণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে যেমনি তোমাদের পূর্ব
বর্তীদের অপর করা হয়েছিল।
যাতে তোমরা পুরোপুরি তাকওয়া অর্জন করতে পারো। অতএব চিরস্থায়ী জীবনের জন্য
আত্মশুদ্ধি অর্জনই হউক আমাদের রোজা রাখিবার মূল উদ্দেশ্য। উপরিউক্ত রোজার সঠিক ও
মূল উদ্দেশ্য মেনে রমজানের রোজা রাখার নিয়ত করি এবং রোজা রাখব।
শেষ কথা
সাওম পালনে কি কি সুফল রয়েছে এবং সাওম পালনের আরো অন্যান্য বিষয়ে উপরে বিস্তারিত
ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সাওম পালনে অনেক সুফল দিক রয়েছে সেগুলো অনুসরন করে সাওম
পালন করা প্রয়োজন। সাওম ইসলামের স্তম্ভের প্রধান এবং অন্যতম বিষয়। সাওম পালনের
মাধ্যমে যেমন আমরা সকল প্রকার পাপকাজ সহ খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি।
সাওম পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পাশাপাশি, আল্লাহ তায়ালার রহমত,
মাগফিরাত এবং নাজাত থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি। তাই আমাদের সকলের উচিত সাওমের
পরিপূর্ণ সুফল মেনে রমজানের রোজা পালন করা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url